শনিবার, ২৮ Jun ২০২৫, ০৯:০৭ পূর্বাহ্ন
কক্সবাজারের শুটকি উৎপাদন (এক)
আবদুল আজিজ:
কক্সবাজারে শুটকি উৎপাদনের ভর মৌসুম চলছে। জেলার উপকুলীয় অঞ্চলে গড়ে উঠা ৩৫টি শুটকি মহালে এসব শুটকি উৎপাদিত হচ্ছে। চলতি বছরে ৪০ হাজার মেট্রিক টন শুটকি উৎপাদনের টার্গেট নিয়ে ব্যস্ত সময় পার করছেন শ্রমিক ও ব্যবসায়ীরা। চলতি বছরে মৌসুম ভাল হওয়ায় ক্ষতি পুষিয়ে লাভের আশা করছেন তারা। মৎস্য বিভাগ বলছে, দেশে চাহিদার শতকরা ৬০ ভাগ শুটকি কক্সবাজারে উৎপাদিত হচ্ছে। দেশের চাহিদা মিটিয়ে বিদেশে রপ্তানি হচ্ছে।
কক্সবাজার শহর থেকে ১০ কিলোমিটার উত্তর-পশ্চিমে নাজিরারটেক। এখানে গড়ে উঠেছে দেশের বৃহৎ শুটকি পল্লী। এ পল্লীর যেদিকে চোখে যায় হরেক রকমের মাছ। ভাদ্র থেকে জৈষ্ঠ্য মাস পর্যন্ত তুমুল ব্যস্ততায় দিন পার করেন ব্যবসায়ী-শ্রমিকরা। সাগর থেকে আহরণকৃত ২০ ধরনের মাছ রোদে শুকিয়ে শুটকি তৈরী করেন তারা। এই প্রক্রিয়াজাতকরণ ও ব্যবসার সাথে সম্পৃক্ত লক্ষাধিক মানুষ।
শুটকিপল্লী এলাকা কাজ ঘুরে দেখা যায়, সাগর থেকে আহরণকৃত লইট্যা, ছুরি, লাক্ষ্যা, চামিলা, ফাইস্যাসহ হরেক রকমের মাছ বাঁশের তৈরী মাচায় ঝুলানো কিংবা বিছিয়ে দিতে ব্যস্ত সময় পারছেন কয়েক হাজার শ্রমিক। তবে তপ্ত রোদে ঘাম ঝরানোর উৎসবে নারীরাই এগিয়ে। অনেকের এটাই জীবনের একমাত্র অবলম্বন। তবে মালিক পক্ষের মজুরির টাকায় সংসার চলে না তাদের।
শ্রমিক ছকিনা বেগম কক্সবাজার ভয়েসকে বলেন, ‘সকাল থেকে সন্ধ্যা পর্যন্ত সওদাগরদের (মালিক) নির্দেশনা মেনে কাজ করি। দৈনিক ৩৫০ টাকা বেতন দেয়। আয়ের চেয়ে খরচ বেশি। এ টাকায় সংসার চলে না।’
মরজিনা আক্তার নামের আরেক শ্রমিক কক্সবাজার ভয়েসকে বলেন, ‘সাগর থেকে আহরণকৃত মাছ বেছে পার্থক্য করি। তারপর রোদে শুকাই, এবাবে দিন যাচ্ছে। সংসারে তিন সন্তান রয়েছে। দু’জন স্কুলে পড়ে, খরচ নিয়ে টানাপোড়নে আছি।’
কক্সবাজার নাজিরারটেক শুটকি পল্লীতে ব্যস্ত কিশোর জেলে, ছবি: কক্সবাজার ভয়েস ডট কম।
শ্রমিক মোহাম্মদ আরাফাত জানান, ‘সকাল ৬টা থেকে বিকেল ৬টা পর্যন্ত কাজ করি। ৩০০ টাকা মজুরি দেয়। যারা কাজ বেশি জানে তারা ৫শ থেকে কেউ ৬শ টাকা পর্যন্ত পায়।’
নুরুল কাদের কক্সবাজার ভয়েসকে জানান, ‘শহরের বাইরে থেকে এসে কাজ করছি। ভাড়া বাসা নিয়ে থাকি। ৪০০ টাকায় খরচ পোষায় না।’
ব্যবসায়ী নুর মোহাম্মদ বাদশা কক্সবাজার ভয়েসকে বলেন, ‘মৌসুমের শুরুতে বৃষ্টির কারণে মাছ নষ্ট হওয়ায় লোকসানে পড়ি। আশা করছি ক্ষতি পুষিয়ে উঠব। সড়ক উন্নয়নে যোগাযোগ সহজ হয়েছে।’
ব্যবসায়ী নাজেম উদ্দীন কক্সবাজার ভয়েসকে বলেন, ‘১৫ থেকে ২০ হাজার শ্রমিক এখানে কাজ করেন। চলতি মৌসুমে সাগরে মাছ কম, তাই দামও বেশি। বাজার মূল্য পেলে আশা করছি লাভ হবে। এ পর্যন্ত এক কোটি টাকার ব্যবসা হয়েছে।’
নাজিরারটেক মৎস্যজীবী সমিতির সভাপতি আমান উল্লাহ কক্সবাজার ভয়েসকে জানান, ‘২০১৯-২০ সালে আমার ব্যবসা প্রতিষ্ঠানে ৭০ লক্ষ টাকার অর্গানিক শুটকি উৎপাদন হয়েছে। চলতি মৌসুমে ১ কোটি টাকার শুটকি বিক্রির আশা করছি।’
কক্সবাজার জেলা মৎস্য কর্মকর্তা এসএম খালেকুজ্জামান কক্সবাজার ভয়েসকে বলেন, ‘কক্সবাজার শহরের নাজিরারটেকসহ ৯ উপজেলার ৩৫টি মহালে চলতি মৌসুমে শুটকি উৎপাদনের টার্গেট ধরা হয়েছে ৪০ হাজার মেট্রিক টন। যা গত বছর ছিল ২৫ হাজার ২৫০ মেট্রিক টন। দেশের চাহিদা মিটিয়ে মধ্যপ্রাচ্য, ইউরোপের বিভিন্ন দেশে ৪শ কোটি টাকার শুটকি রপ্তানি হচ্ছে।
কক্সবাজারে উৎপাদিত শুটকির মানোন্নয়নে জাতিসংঘে বিভিন্ন সংস্থা এবং দেশী-বিদেশী বিভিন্ন প্রতিষ্ঠান সহায়তা করছে। ভবিষ্যতে অর্গানিক শুটকির বিপ্লব ঘটবে বলে প্রত্যাশা করছেন উৎপাদনকারীরা।
ভয়েস/আআ